টাঙ্গাইল-৭ উপ নির্বাচন: শেষ মূহুর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা
মির্জাপুর থেকে: আসন্ন টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের উপ-নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে নির্বাচনী গণ সংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নির্বাচনী নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করার লক্ষ্যে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তাঁরা।
আগামী ১৬ জানুয়ারি শতভাগ ইভিএম পদ্ধতিতে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপ-নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খান আহমেদ শুভ (নৌকা), জাতীয় পার্টি মনোনীত জহিরুল হক জহির (লাঙল), বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির গোলাম নওজব চৌধুরী (হাতুড়ি), বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির রুপা রায় চৌধুরী (ডাব) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম নুরু (মোটর গাড়ি)।
যদিও প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা সেই শুরু থেকেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অন্য প্রার্থীরা সম্প্রতি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম নুরুকে তাঁর কর্মী-সমর্থকসহ গণ সংযোগ করতে দেখা গেলেও বাকি দুই প্রার্থীর কিছু পোস্টার ছাড়া তাদের প্রচার কর্মকান্ড চোখে পড়েনি। নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের মতে এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠে নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন। এদিকে প্রথমবারের মতো মির্জাপুর উপজেলায় একযোগে প্রতিটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। যদিও ব্যালটের পরিবর্তে ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
তবে ইভিএম ব্যবহার ও এই পদ্ধতির সংশয় নিয়ে ভোটারদের ধোয়াশা দূর করতে আগামী ১৪ জানুয়ারি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিন উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ইভিএম এর ব্যবহার সম্পর্কে সাধারণ ভোটারদের ভোট দেয়ার পদ্ধতি দেখানো হবে। অপরদিকে নির্বাচন ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান আর পাড়া-মহল্লা পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে। সেই সঙ্গে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে প্রার্থীরা নেতা-কর্মীদের নিয়ে পাড়া-মহল্লায় গিয়ে উঠান বৈঠক ও পথসভা করছেন। ভোটারদের মন জয় করতে তাঁরা দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্বাচনী হাওয়া বইছে আর কর্মী-সমর্থকদের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
ইতিমধ্যেই ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় ভোটারদের নজর কেড়েছেন আ.লীগের প্রার্থী খান আহমেদ শুভ। তাঁর পক্ষে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের দলের নেতৃবৃন্দ গণ সংযোগ করছেন। অন্যদিকে জাপার প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জহির ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম নুরু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতিদিন ভোট প্রার্থনা করে চলেছেন। কিন্তু অন্য দুই প্রার্থী হাতুড়ি প্রতীকে গোলাম নওজব চৌধুরী ও ডাব প্রতীকের রুপা রায় চৌধুরীকে এখনো ভোটের মাঠে দেখা যায়নি। মূলত আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, “মানুষের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, গণজোয়ার উঠেছে। জাতীয় পার্টির প্রতি মানুষের আস্থা ফিরেছে। এরশাদের আমলের উন্নয়নের কথা মানুষ আবারও স্মরণ করছে।
সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশের দুঃশাসন থেকে মানুষ পরিত্রাণ চায়। তাই আগামী ১৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টিকেই মির্জাপুরবাসী বেছে নেবে বলে আমি মনে করি।” আওয়ামী লীগের প্রার্থী খান আহমেদ শুভ বলেন, “আমার বাবা ফজলুর রহমান খান ফারুক একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পরীক্ষিত সৈনিক। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রয়াত এমপি একাব্বর হোসেনের অসমাপ্ত কাজগুলোকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আগামী ১৬ জানুয়ারি নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হলে মির্জাপুরকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে জনগনের মাঝে উপহার দিতে চাই।” জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এএইচএম কামরুল হাসান জানান, প্রথমবারের মতো এই আসনটিতে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হলেও তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে প্রায় তিন হাজার প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পতিটি ভোটকেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিজিবি, র্যাব, আনসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ থাকবে।
উল্লেখ্য, একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসন গঠিত। উপজেলায় মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১২১টি এবং ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭৫৬টি। এবার মোট ৩ লাখ ৪০ হাজার ৩৭৯ জন হালনাগাদকৃত ভোটার উপ-নির্বাচনে ভোট দেবেন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৫০১ জন এবং নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৭৮ জন। প্রসঙ্গত, এ উপ-নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিসের নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহেদুনবী চৌধুরী।