কলকাতায় রেলস্টেশনের সামনে গান্ধীর পাশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য

এশিয়ার অন্যতম ব্যস্ততম রেলস্টেশন কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন। সেখানে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষের যাতায়াত। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার এই রেলস্টেশনটির প্রধান প্রবেশদ্বারের উল্টো দিকে রয়েছে এন. আর. এস. হাসপাতাল। আর সেই হাসপাতালের ডান দিকের প্রাচীরের গায়ে এখন শোভা পাচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশের জাতির জনক জনকদের বিশাল আবক্ষ ভাস্কর্য।

একদিকে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী, অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে ভাস্কর্য দুটি কোনো সরকারি অর্থায়নে হয়নি। এটি স্থাপন করেছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদ পরেশ পাল।

বছর খানেক আগে দুই দেশের জাতির পিতাদের আবক্ষ ভাস্কর্য বসানোর পরিকল্পনা নেন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের বেলেঘাটা কেন্দ্রের বিধায়ক পরেশ পাল। এরপর শুরু হয় ভাস্কর্য তৈরির কাজ। সম্প্রতি ভাস্কর্য দুটি উন্মোচন করেছেন বিধায়ক।

ফাইবারের তৈরি শ্বেতশুভ্র ভাস্কর্য দুটি দিনের বেলায় যতটা না ভালো লাগছে, রাতের মায়াবী আলোয় তা হয়ে উঠেছে আরও অপূর্ব। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে নেমে যারা হাওড়া কিংবা শহরতলীর অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য বাস বা সিএনজি ধরার অপেক্ষা করছেন, তাদের সবারই চোখে পড়তে বাধ্য ভাস্কর্য দুটি। কেউ এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে দেখছেন, কেউ ছবি তুলছেন, এরপর আবার পথচলা শুরু।

উত্তর কলকাতার বেলেঘাটা এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের একজন দক্ষ প্রশাসকের পাশাপাশি সমাজকর্মী হিসেবে পরিচিত পরেশ পালের জন্ম বাংলাদেশের বরিশালে, মামা বাড়ি খুলনায়। যদিও পরবর্তীতে বাবা-মায়ের হাত ধরে চলে আসেন কলকাতায়। স্বভাবতই, আজও শিকড়ের টান অনুভব করেন তিনি।

পরেশ পাল বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ শান্তির দূত। আমি যেমন আমার দেশের জাতির পিতা গান্ধীজিকে ভালোবাসি, তেমনি সংগ্রামী চরিত্র শেখ মুজিবুর রহমানকেও ভক্তি-শ্রদ্ধা করি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকেও আমি ভীষণ শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি। এসব ভেবেই দুই দেশের জাতির জনকদের আবক্ষ ভাস্কর্য তৈরির কথা ভাবি। তাছাড়া, এতে অসুবিধা কোথায়? আমাদের দিদি মমতা ব্যানার্জী উদার মনের মানুষ। তিনি কোনোদিন এসব বিষয়ে অনুৎসাহিত করেননি।

কেউ কেউ বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীর (১৭ মার্চ) আগে কলকাতার পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে বিশেষ উপহার দেওয়া হলো এর মাধ্যমে।

বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ভারত কমিটির সভাপতি মীর এম. এম শামীম জানান, শিয়ালদহ স্টেশনের বাইরে দুই দেশের জাতির জনকদের আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে, তা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নিদর্শন বলে মনে করি।

স্থানীয় বিধায় পরেশ পালের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শামীম বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অতিনিবিড়। পড়াশোনার জন্য ১৯৪২ সালে তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা, বেড়ে ওঠা, রাজনীতিতে অভিষেক এই কলকাতার মাটিতেই হয়েছিল। তাছাড়া তিনি শুধু বাঙালির জাতির পিতা নন, তিনি একজন বিশ্বনেতাও। মহাত্মা গান্ধীও বিশ্বনেতা। তাই তাদের নিয়ে চর্চা তো হতেই পারে।

ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাবের মুখপাত্র দীপক দেবনাথ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের আগে এটা কার্যত কলকাতাবাসীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জন্য উপহার। কলকাতায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বেকার হোস্টেলে তার আরেকটি আবক্ষ ভাস্কর্য রয়েছে। তবে সেটি সাধারণ মানুষের জন্য সবসময় দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু শিয়ালদহ রেলস্টেশনের বাইরে দুই দেশের জাতির পিতাদের ভাস্কর্য প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষকে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী ও বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Created with Visual Composer