তৃণমূলকে জাগাতে জেগে উঠুক আওয়ামী লীগ

আজ উপমহাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিনটিকে ঘিরে ত্যাগী থেকে ট্যাগী নেতা কর্মীদের উচ্ছ্বাস উন্মাদনার কমতি নেই। কিন্তু আমার কাছে উচ্ছ্বাস উন্মাদনার চেয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠাই বেশি ভীড় করছে। কারণ বিগত বছরগুলোতে রাজনীতি ক্রমেই সংকোচিত হয়ে আসছে। একজন আওয়ামী পরিবারের সন্তান হিসেবে আমার এই উদ্বেগ উৎকণ্ঠার বেশির ভাগই স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে।

যেদিন থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দের সিদ্ধান্ত দেয়া হয় সেদিন থেকেই তৃণমূল রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক মেরে দেয়ার সুযোগ পেয়ে যান স্থানীয় রাজনীতিতে হনু হয়ে ওঠা মহানায়করা।

এমন একটা বিশৃঙ্খল আর অরাজনৈতিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে যেখানে ত্যাগী আর যোগ্যরা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। তৃণমূল রাজনীতিই হলো রাজনীতির প্রাণ। সেই তৃণমূল রাজনীতিকে বাঁচাতে চাইলে সবার আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে যে অর্থের ঝনঝনানি শুরু হয়েছে সেটা থামাতে হবে। কারণ আমরা দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলাগুলোতে দলীয় প্রতীক বিক্রির খবর শুনতে পাই।

সবচেয়ে দুঃখের খবর আজ টাকার বিনিময়ে জামাত, বিএনপির লোকেরাও ত্যাগী আওয়ামীলাগরদের টেক্কা দিয়ে অর্থের বিনিময়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে আসছেন! এটা যেকোন মূল্যে থামাতে হবে। মাননীয় নেত্রীকে অনুরোধ করব তৃণমূল বাঁচাতে প্রয়োজনে এনএসআই, ডিজিএফআইয়ের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হোক স্থানীয় নির্বাচনের এই আত্মঘাতি মনোনয়ন বাণিজ্যকে। এখানে যেসকল আওয়ামী লীগ নেতা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হোক। সে এমপি হোক আর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হোক। দলের স্বার্থেই ব্যবস্থা নেয়া হোক। কারণ তাদের কারণেই আওয়ামী লীগ তৃণমূলে কোনঠাসা হয়ে যাচ্ছে। যা পিতা মুজিবের রক্তের সাথে স্পষ্ট বেঈমানী।

ভুলে গেলে চলবে না বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটা অনুভূতির নাম। বঙ্গবন্ধু, ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, শামসুল হক, তাজ উদ্দিন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মত খাটি সোনাদের দলের নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই আওয়ামী লীগে টাকার পাহাড় গড়তে থাকাদের দৌড়াত্ব কমুক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যদি সৎ ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারেন তাহলে এমপি, মন্ত্রীরা কেন পারবেন না? জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা কেন পারবেন না? দলের স্বার্থে তৃণমূলকে বাঁচাতে মনোনয়ন বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের লাগাম টানা জরুরী। না হলে এর জন্য সামনে চরম মূল্য দিতে হবে আবেগ অনুভূতির প্রিয় সংগঠনকে। এখনই সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে কাকের বাসায় ডিম পারা কোকিলদের হাত থেকে রক্ষা করার।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সফল হোক। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Created with Visual Composer