বাংলাদেশকে একাই টানছেন মুশফিকঃ স্কোর ৩৬১/৯

বাংলাদেশকে একাই টেনে নিচ্ছেন মুশফিকুর রহিম। মিরপুর টেস্টে ফিরে এসেছিলো গতকাল সকালের সেই পুরানো ভূতই। যথারিতী নিয়মিত বিরতিতে একপ্রান্তে যাওয়া অসাার মিছিল। সে মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে বাঁধার দেয়াল টেনেছেন নিজের চওড়া ব্যাট দিয়ে। হার না মানা ১৭১ রানের আরও একটি মহাকব্যিক ইনিংসে বাংলাদেশকে ৩৬১ রানের পুঁজি  এনে দিয়েছেন। হাতে মাত্র ১ টি উইকেট। আর ১৪ টি রানও যদি যোগ করা যায় তাহলে ড্রাইভিং সিটে বাংলাদেশই থাকবে। আক্ষেপের কথা হলো ক্যারিয়ারের ৪র্থ ডাবল সেঞুরি উঁকি দিলেও যোগ্য সঙ্গীর অভাবে তা আর হচ্ছে না। তাই লাঞ্চের পর টার্গেট আর যত রান যোগ করা যায়।

তখন মধাহ্নভোজ বিরতির জন্য ২ ওভার বাকি মাত্র। তাইজুল ইসলামকে নিয়ে ব্যাট করছেন মুশফিকুর রহিম। বিরতির আগে দলকে বিপদে পড়তে দিতে চাননি অভিজ্ঞ মুশফিক। এজন্য অসিথা ফার্নান্দোর করা ইনিংসের ১০৬তম ওভারে তাইজুলকে স্ট্রাইক দিতেও চাননি তিনি। তবে দৌড়ে ২ রান নিতে গিয়ে সফল না হওয়ায় বাধ্য হয়ে সিঙ্গেল নিতে হয়। মুশফিকের অভিব্যক্তিতে হতাশার ছাপ। সে ওভারে তার ২ বল পরেই আউট তাইজুল।

মহাকাব্যিক এক জুটিতে বাংলাদেশ দলকে খাদের কিনার থেকে টেনে তোলেন মুশফিকুর রহিম আর লিটন দাস। তাদের রেকর্ড জুটিতে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনটা নিজেদের নামে লেখে টাইগাররা। তবে দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ছন্দপতন স্বাগতিকদের। লিটনের ফেরার পর প্রত্যাবর্তন রাঙাতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তাইজুল আর খালেদ আহমেদও দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেননি। কিন্তু অন্যপ্রান্তে অবিচল মুশফিক।

ঢাকা টেস্টে দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যক্তিগত দেড়শ রানের কোটা পার করেছেন মুশফিক। অপরাজিত আছেন ১৭১ রান নিয়ে। সঙ্গে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তার সঙ্গী হিসেবে শূন্য রানে ব্যাট করছেন এবাদত হোসেন। অলআউট হওয়ার শঙ্কা মাথায় নিয়ে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যাওয়ার আগে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৬১ রানের সংগ্রহ পেয়েছে টাইগাররা।

২৪ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর দলের হাল ধরে মুশফিক-লিটন জুটি। ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনে দুইজন নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন দিনের বাকি ৭৮ ওভার ১ বল। দলকে বিপদমুক্ত করার পাশাপাশি প্রথম ইনিংসে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যান তারা। প্রথম দিনে তাদের অবিচ্ছেদ্য পার্টনারশিপ থেকে আসে ২৫৩ রান। আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে তাদের ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে ছিল গোটা দেশ। শুরুটাও নেহায়েত মন্দ হয়নি।

তবে ছন্দটা ধরে রাখতে পারলেন না লিটন। টেস্টে প্রথমবারের মতো দেড়শ রানের মাইলফলক ছোঁয়ার দিকে ছুটতে গিয়ে আউট হন ব্যক্তিগত ১৪১ রানে। কাসুন রাজিথার হালকা ভেতরে ঢোকা বল লিটনের ব্যাটের বাইরের কানা নিয়ে যায় দ্বিতীয় স্লিপে। নিচু ক্যাচ দারুণ দক্ষতায় মুঠোয় জমান হাসপাতাল থেকে ফেরা কুশল মেন্ডিস। আর তাতে ভাঙে মুশফিকের সঙ্গে তার ২৭২ রানের জুটি। ২৪৬ বলে ১৬ চার ও ১ ছক্কায় ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন তিনি।

৯৮৭ দিন পর আবার টেস্ট খেলতে নামা মোসাদ্দেক নিজের প্রত্যাবর্তন রাঙাতে পারেননি। রাজিথার ওই ওভারেই অফ স্টাম্পের খানিক বাইরের ডিলিভারিতে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মোসাদ্দেক। শূন্য হাতে সাজ ঘরের পথ ধরেন এই ডানহাতি। এরপর তাইজুল ইসলামকে নিয়ে লড়াই করতে থাকেন মুশফিক।

তাইজুল ভালোই সঙ্গ দিচ্ছিলেন তাকে। তবে বিপত্তি বাঁধে প্রথম সেশনের বিরতির ২ ওভার আগে। অসিথার লাফিয়ে ওঠা বল খেলতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি। তাইজুলের ৩৭ বলের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসটি থামে ১৫ রানে। যেখানে এই স্পিনার চার মারেন ২টি। আসিথার করা পরের ওভারে একই পথে হাঁটেন লেজের দিকের ব্যাটসম্যান খালেদ আহমেদ। তিনিও খুলতে পারেননি রানের খাতা।

শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আসেন এবাদত। তাতে ৩০ মিনিট বাড়তি খেলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন ম্যাচ অফিশিয়ালরা। এর মধ্যে অবশ্য একবার আউট হয়েছিলেন এবাদত। তবে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দলকে এ যাত্রায় অলআউট হওয়া থেকে বাঁচান তিনি। প্রথম সেশন শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৬১ রান নিয়ে বিরতিতে গেছে বাংলাদেশ দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Created with Visual Composer