মাওয়ায় ঘুরতে গিয়ে পরিবারসহ ডাকাতির শিকার ঢাবি ছাত্রী

প্রবাসী মামার পরিবারের সদসদ্যের সঙ্গে ঘুরতে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী সামিয়া মাসুদ মুমু। রাত দেড়টার দিকে মাইক্রোবাসে করে ফেরার পথে ফিল্মি স্টাইলে ডাকাতির শিকার হয়েছেন ওই ছাত্রীসহ গাড়িতে থাকা পরিবারের অন্তত ১০ সদস্য। ডাকাতির কবলে পড়ে নগদ অর্থ, ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গচ্চা গেছে তাদের।

গত মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার বিএমস্পিনিং মিলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ ফোন করেও তারা সাহায্য পাননি বলে জানান তারা। এদিকে, বিমানের টিকেট অগ্রিম কেটে রাখায় ওই ছাত্রীর মামা ওবায়দুল মোল্লা ও মামী লিজা মোল্লা গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) মালেশিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।

এ ঘটনার পরদিন বুধবার (১৫ মার্চ) রূপগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তবে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের চালককে ছিনতাইকারী দলের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে থানায় মামলা করা থেকে বিরত রয়েছে বলে জানা গেছে। ছিনতাইকারী সিলভার কালারের মাইক্রোবাস ব্যবহার করেছিলো, যার নাম্বার- ঢাকা মেট্রো চ ১৯৬৮২২।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা হচ্ছেন, ঢাবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী সামিয়া মাসুদ মুমু (২০), ওবাইদুল মোল্লা (৪৫), লিজা মোল্লা (৪১), মিমরাজি সরকার (২৯), জোয়েনা (৩৯), নেয়ামা মাসুদ রিন্তি (১১), আশরাফি সরকার (২৬), মাসুদ ফকির (৫২) ও সালমান (১০)।

জানতে চাইলে আজ শুক্রবার রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পরেশ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ঘটনায় আইফোন হারানোর একটি জিডি করা হয়েছে। আমরা আইফোনটি উদ্ধারের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছি। কিন্তু ফোনটিতে মালেশিয়ার সিম ছিল; বাংলাদেশের সিম না থাকায় এটির অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া হারানো জিনিসপত্র উদ্ধারের জন্যও আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ওসি আতাউর রহমান ফোনে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি থানায় এসে এই প্রতিবেদককে কথা বলতে অনুরোধ করেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ঢাবি ছাত্রী মুমু বলেন, ঘটনার দিন আমরা সপরিবারে মাওয়া বেড়াতে যাই। রাত দেড়টার দিকে রূপগঞ্জ থানার বিএমস্পিনিং মিলের সামনে ৬ জন আমাদের মাইক্রোবাস থামায়। প্রথমে তারা আমাদের ড্রাইভারকে থামাতে বলে গাড়ির জানালায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এসময়  তারা আর্মি ক্যাপ, শার্ট, মাস্ক পরা ছিলো। তবে আমি তাদেরকে দেখেই বুঝে ফেলি যে তারা পুলিশ বা সেনাবাহিনীর কোনো লোক নয়।

“তখন আমি ড্রাইভারকে নিষেধ করি গাড়ির দরজা খুলতে আর বলছিলাম তারা পুলিশ নয়, ছিনতাইকারী। তখন ড্রাইভার ভয় পেয়ে গাড়ির গ্লাস খুলে দিয়েছিল। গ্লাস খোলার সঙ্গে সঙ্গে ছিনতাইকারীরা গাড়ির চাবি নিয়ে যায় এবং লক খুলে দেয়। তখনই আমি ৯৯৯–এ কল করি, কিন্তু সেসময় তাদের সব লাইন ব্যস্ত ছিল। তখন ছিনতাইকারীরা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং লাঠি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে।”

তিনি বলেন ততক্ষণে ছিনতাইকারীরা আমাদের মাইক্রোবাসের বাম দিকের দরজা টেনে খুলে ফেলে এবং আমার ছোটবোনের গলার চেইন নিয়ে নেয়। তারপর বোনকে পেছন দিকে ঠেলে আমার মামার ব্যাগ নিয়ে টানাটানি শুরু করে এবং মামাকে মোটা লাঠি দিয়ে কয়েকজন এলোপাতাড়ি মারা শুরু করে। এসময় মামাকে কিছু একটা দিয়ে ইলেকট্রিক শক দেয়া শুরু করে। মামা তখন চিৎকার করছিলেন এবং তাদেরকে পালটা আক্রমণ করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তখন তারা আরও বেশি করে শক দেয়া শুরু করে। মামি ভাঙা ভাঙা বাংলায় (মালেশিয়ার নাগরিক) তাদেরকে বারবার অনুরোধ করছিলেন,কিন্তু তবুও তারা তাকে রক্তাক্ত করে। মামার পাশে থাকা আমার দুই কাজিন এবং মামি তাকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রচুর মার খায়। আমাকেও তারা অনেকবার ইলেকট্রিক শক দেয়।

ঢাবির এই ছাত্রী ড্রাইভারকে সন্দেহ করে বলেন, ঘটনায় তারা আমাদের কাছে থাকা সকল কিছু নিয়ে নিলেও ড্রাইভারের গায়ে হাত তোলা বা তার দামী মোবাইল সেটা বা টাকা ছুঁয়েও দেখেনি। তাছাড়া ড্রাইভারকে আমি এতবার গাড়ি না থামিয়ে চলে যেতে বললেও তিনি গাড়ি থামিয়ে রাখেন। পরে আবারও তাকে জানালা খুলতে নিষেধ করার পরেও জানালা খুলেন যার ফলে ছিনতাইকারীরা আমাদের উপর চড়াও হবার সুযোগ পায়।

“ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমি ৯৯৯-এ ফোন দিলেও বারবার লাইন ব্যস্ত দেখায়। পরে আমরা রূপগঞ্জ থানায় মামলা করতে থানায় গেলে ওসি আতাউর রহমান আমাদের বিভিন্ন দিক বুঝিয়ে মামলা করতে নিরুৎসাহিত করলে আমার পরিবার মামলা করতে বিরত থাকে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সামিয়া মাসুদ মুমু ও তার পরিবারের উপর ঘটে যাওয়া ফিল্মি স্টাইলে ডাকাতির এ ঘটনার যথাযথ বিচার চান ভুক্তভোগীরা। এ জন্য তারা সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

Created with Visual Composer