বিশ্বকাপ জিততে পারেন সাকিব আল হাসান
বিশ্বকাপ জিততে পারেন সাকিব আল হাসান। ভারতের মাটিতে ২০২৩ বিশ্বকাপে দারুণ কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশের। ক্রিকেটকে বলা হয়ে থাকে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। নাটকীয়তায় ঠাসা ক্রিকেটে নিজেদের দিনে যেকোন কিছুই সম্ভব। তাই বলে সেটা যে বিশ্বকাপ জয় নয় তা সবাই জানে। বিশ্বকাপ জিততে হলে আপনাকে সবার আগে দারুণ একটা দল হয়ে উঠতে হবে। সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। যে বিশ্বকাপকে ঘিরে এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন ক্রিকেট ম্যাগাজিনে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা ফেবারিট দলের নাম প্রকাশ শুরু করে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ উপমহাদেশের উইকেটে গত ১২ বছর ধরে যে ধরনের হাইকোয়ালিটি ক্রিকেট খেলে আসছে তাতে সাকিব আল হাসানের দলকে অনেকেই ফেবারিটের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও রাখা শুরু করেছে। সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে বাংলাদেশ গত ১২ বছর ক্রিকেটের সবগুলো সংস্ককরণ মিলিয়ে ১৯ বার প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা উপহার দিয়েছে। সিরিজ জয়ের হিসেব তো বাদই গেলো। ঘরের মাঠে গত ১২ বছরে ওয়ানডেতে কেবল ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া ছাড়া সবাইকেই সিরিজ হারিয়েছে। এ থেকেই সবাই বুঝে নিচ্ছে উপমহাদেশের কন্ডিশনে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ঠিক কতটা শক্তিশালী দল সম্প্রতি সাদা বলের ক্রিকেটে টি-২০তে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াশের পর থেকেই আলোচনায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু। সে সম্ভাবনা নিয়েই বিডিনিউজ ট্র্যাকারের আজকের আয়োজন।
শুরু করছি অদ্ভুদ একটি স্ট্যাট দিয়ে যেখানে দেখছেন ক্রিকেট এবং ফুটবলের ২ মহাতারকা শচীন এবং মেসির জন্মদিন ২৪ তারিখ এবং উভয় লিজেন্ডই নিজেদের শেষ বিশ্বকাপে বিজয়ীর হাসি হেসেছেন।
শচীন তেন্ডুলকারের জন্মদিন ২৪ তারিখ = শেষ বিশ্বকাপ জয়
লিওনেল মেসির জন্মদিন ২৪ তারিখ = শেষ বিশ্বকাপ জয়
সাকিব আল হাসানের জন্মদিন ২৪ তারিখ = ?
কারণ বিশ্বকাপ জয়ের আগে সবচেয়ে বড় রসদ হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। সাকিব আল হাসানের দলকে মেন্টালি মোটিভেটেড করতেই এই তথ্য উপস্থাপন করা। এবার আসি সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে। সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার কে? ব্র্যাডম্যান কিংবা শচিন টেন্ডুলকারের কেউ হবেন। কিন্তু সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার কে এই প্রশ্নের উত্তরে ঘুরে ফিরে সাকিব আল হাসানের নামই আসছে। দিন যত যাচ্ছে রেকর্ড পরিসংখ্যান ততই সাকিব আল হাসানের পক্ষেই কথা বলছে। বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২০০০ রান ও ৬০০ উইকেটে ডাবল সাকিব আল হাসানেরেই। অদূর ভবিষ্যতেও কেউ যে এই রেকর্ডে ভাগ বসাতে পারবেন তার কোন সম্ভবাবনাও চোখে পড়ছে না। যাহোক কথা হচ্ছিলো সাকিব আল হাসানের বিশ্বকাপ জয় নিয়ে। বাংলাদেশ দলটি চন্ডিকা হাতুরাসিংহের আন্ডারে যে ধরণের ক্রিকেট খেলা শুরু করেছে তাতে উপমহাদেশের মাটিতে কেন বিশ্বের যেকোন কন্ডিশনে বিশ্বের যেকোন দলকেই চমকে দিতে পারে। এর পেছনে অবশ্যই অ্যালান ডোনাল্ডের অধীনে তাসকিন-হাসান-এবাদত এবং ফিজের অবদান। ক্রিকেট এক্সপার্টদের মতে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের অন্যতম ৪ ফেবারিট দল হচ্ছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডও থাকবে রেসে। তবে শেষ ১৬ বছরের রেকর্ড বলছে ওয়ানডে ক্রিকেটে কেউ ব্যাক টু ব্যাক শিরোপা জিততে পারে না। এরপর আসবে ভারতের নাম। ভারত তাদের নিজেদের মাটিতে অনুষ্ঠিত কোন আইসিসি ইভেন্টে সেমির বাধাই টপকাতে পারেনি। যেকারণে ধারণা করা হচ্ছে ২০২৩ সালেও ভারত বিদায় নিবে সেমিফাইনাল থেকেই। রইল বাকি অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড। উপমহাদেশের পরিচিত কন্ডিশনে ৯০% মানুষের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে ১৯৯৬ সালের শ্রীলঙ্কা। কারণ সেবার শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বিশ্বে তেমন প্রতিষ্ঠিত কোন দল ছিলো না। নামের পাশে ৫০ টি জয়ের রেকর্ডও ছিলো না। প্রতিপক্ষকে ৫ বার হোয়াইওয়াশ করার রেকর্ডও ছিলো না। সেখানে বাংলাদেশের নামের পাশে প্রতিপক্ষকে ১৯ বার হোয়াইটওয়াশের গৌরব থাকছে। সাথে থাকছে আন্তর্জাতিক ম্যাচে (ওয়ানডে ১৪৯+ টি-২০ ৫৫ + টেস্ট ১৬) ২২০+ জয়ের রেকর্ডও। ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কা যখন বিশ্বকাপ জেতে তাদের নামের পাশে এত সমৃদ্ধ রেকর্ড ছিলো না। সেখানে বাংলাদেশের সাদা বলের ক্রিকেটে রেকর্ড তো অনেক সৃমদ্ধ। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে ক্রমেই দূর্দান্ত একটা দল হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। এই দলে মোস্তাফিজের মত বিশ্বসেরা বোলারই এখন একাদশে সুযোগ হারান। তাসকিন-হাসান-এবাদত ট্রায়োকে ধরা হচ্ছে অন্যতম সেরা পেসা ত্রয়ী। স্পিনে সাকিব আল হাসানের সাথে মিরাজের জুটি হতে পারে বিপজ্জনক। ৩ জন পেসার ভালো করলে ২ স্পিানারেই জব ডান। কিন্তু স্পিন ট্র্যাকে খেলা হলে সাকিব ও মিরাজরে সাথে তৃতীয় স্পিনার কে হবেন সেই জায়গায় কাজ চলছে। একজন লেগস্পিানারকে সে কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া নাসুম-তাইজুল-তানভীরও থাকছেন রেসে শুধু মাত্র একটা স্পটের জন্য। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল মোটামোটি কনফার্মই বলা যায়। ১-৬ পর্যন্ত ব্যাটিং অর্ডারও ফিক্সড হয়ে গেছে। যেখানে তামিম-লিটন-শান্ত-সাকিব-তাওহীদ-মুশফিক ১ থেকে ৬ পর্যন্ত ব্যাট করবেন। সাকিব আল হাসানের এই দলটিতে দুশ্চিন্তার নাম ব্যাটিংয়ের ৭ নং পজিশন। কারণ এই পজিশনে একজন ফিনিশার দরকার। ইয়াসির কে দিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাকে দিয়ে হবে বলে মনে হচ্ছে না। আফিফও ব্যর্থ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং মোসাদ্দেকও রেসে থাকবেন এই পজিশনের জন্য।
সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ বিশ্বকাপে যদি সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি না হতে হয় তাহলে বাংলাদেশের ফাইনালে না খেলার কোন কারণ নেই। আর একবার যদি ফাইনালে উঠেই যায় সাকিব আল হাসানের দলের সবাই যে নিজের সেরাটা দিয়ে সাকিব আল হাসানের শেষটা রাঙিয়ে দিতে শতভাগ দিয়ে মাঠে নামবেন তা বলাই যায়। সবচেয়ে মজার বিষয় বাংলাদেশ যদি ফাইনালে উঠেই যায় বাংলাদেশ সরকার ঢাকা টু দিল্লী বিশেষ বিমান সার্ভিস চালু করে কম করে হলেও ২০-৩০ হাজার সমর্থক ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। পাশের দেশ ভারতে একটা বিশ্বকাপের ফাইনাল হবে সেখান থেকে জয় নিয়ে না ফেরার কোন কারণ থাকবে না। তবে প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশ ২০২৩ সালে বিশ্বকাপ জিতবে তাতে সেমি কিংবা ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হওয়া যাবে না। যদি এই জায়গায় ভাগ্য বাংলাদেশকে ফেবার করে তাহলে ২০২৩ বিশ্বকাপটা হতে পারে সাকিব আল হাসানের।