লন্ডনে নিজ বাসায় বাংলাদেশি নারী খুন!

পূর্ব লন্ডনের আবাসিক এলাকার একটি জনবহুল ও বহুতল ফ্ল্যাটের নিচতলায় হত্যার শিকার হয়েছেন ইয়াসমীন বেগম নামের একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি মা। এই হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে কাইয়ূম মিয়া নামের ৪০ বছর বয়সী এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে হোমারটন হাইষ্ট্রিট থেকে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি ও পরিচয় গোপন এবং মিথ্যা তথ্য প্রদান মিলিয়ে ৪ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নিহত ইয়াসমীন সিংগেল মাদার হিসাবে ৫ ও ১০ বছরের দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন। তার বাড়ি বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার আউশকান্দি এলাকায়।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২৪ মার্চ সকালে ইয়াসমীন রজার্স এষ্টেটের বাসা থেকে ১ মিনিট হাঁটা দূরত্বে বঙ্গবন্ধু প্রাইমারী স্কুলে দিয়ে আসেন দুই নাবালক শিশুকে। বড় ছেলে পড়ছে ইয়ার ফাইভে, ছোট ছেলে পড়ছে রিসিপশনে। এসময় অন্য আরেকজন অভিভাবকের সাথে কথা বলেন বড় ছেলের হার্টের অসুখ নিয়ে। ইয়াসমীন ছেলেকে বাংলাদেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। কারণ এনএইচএসের চিকিৎসায় তিনি ভরসা পাচ্ছিলেন না। তারপর একজন প্রতিবেশী বলছিলেন, উনার সাথে দেখা হয় দুপুর ২টায়। একই বিল্ডিংয়ের বাসিন্দা সাংবাদিক সৈয়দ জহুরুল হক বলছিলেন, আমার মেয়ে নিহত ইয়াসমীনের ছোট ছেলের সাথে রিসিপশনে যায়, একজন প্রতিবেশীর কাছে শুনেছি ইয়াসমীন দুপুর ২টার দিকে উনার বাসায় গিয়েছিলেন। তাহলে বুঝা যাচ্ছে এই হত্যা ২টা থেকে ৩টার মধ্যে হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে ইয়াসমীন হত্যার শিকার হয়েছেন দুপুর ২টা থেকে ৩টার মধ্যে। স্কুল ছুটি হলে ইয়াসমীন বাচ্চাদের আনতে যাননি, তারপর স্কুল থেকে ফোন করে না পাওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশে কল করে। পুলিশ এসে বিকাল ৪টা ৬ মিনিটে দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করে। সেই ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে জানা যায় বিস্তারিত।

 

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি বলছিলেন, তিনি এ সময় গাড়ি নিয়ে আসছিলেন। এষ্টেটে এতো বেশী পুলিশ থাকায় তিনি দাঁড়িয়ে যান। প্রথমে ভেবেছিলেন কোন ড্রাগ ডিলার ধরতে এসেছে পুলিশ। যখন বঙ্গবন্ধু স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক ও ষ্টাফ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন তখনই তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন স্কুল থেকে বাচ্চা আনতে যাননি মা। এরপরই পুলিশ দরজা ভেঙে ইয়াসমীনের লাশ উদ্ধার করে। তারপরই পুলিশ শুরু করে হত্যা তদন্ত।

গোয়েন্দা পুলিশ, ফরেনসিক টিম, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড পুরো এলাকা ঘিরে শুরু করে তদন্ত। ২৬ মার্চ শনিবার ইয়াসমীনের পোষ্টমর্টেম হয়। জানা যায় শরীরে ধারালো কিছু দিয়ে বেশ কয়েকটি আঘাত করা হয়। হত্যার ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর ২৬ মার্চ রাতে স্থানীয় এলাকাবাসী ও বায়তুল আমান মসজিদের পক্ষ থেকে এক দোয়ার আয়োজন করা হয়। এসময় স্থানীয় কাউন্সিলার সিরাজুল ইসলাম ছিলেন। এসময় উপস্থিত কমিউনিটি ওয়ার্কার ও সাংবাদিক আহাদ চৌধুরী বাবু জানান, এখানে হাঁটা দূরত্বে দুটি স্কুল ও একটি মাদ্রাসা। অথচ রাস্তায় সিসিটিভি কাজ করছে না। এসময় ঘটনাস্থল ভিজিট করতে আসেন মেয়র জন বিগস। তিনি নিশ্চিত করেন বাসিন্দাদের নিরাপত্তা জোরদার করতে কাউন্সিল কাজ করছে প্রতিনিয়ত। তিনি নিহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। সেই সাথে বাচ্চা দুটির ভবিষতের জন্য কাউন্সিল কাজ করে যাবে বলেও জানান তিনি। এসময় বাসিন্দারা এই হত্যাকারী গ্রেফতারে পুলিশের তৎপরতা জোরদারের আহবান জানান।

২৭ মার্চ রবিবার সকাল ৮টা ৫৭ মিনিটে, ঘটনা ঘটার প্রায় তিন দিন পর পুলিশ নিশ্চিত করে হত্যাকারী সন্দেহে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৮ মার্চ সোমবার সকাল ৮টা ২৩ মিনিটে পুলিশ হত্যাকারীর নাম প্রকাশ করে। হত্যাকারীর নাম কাইয়ূম মিয়া, বয়স ৪০ বছর। সে পূর্ব লণ্ডনের হোমারটন হাইষ্ট্রিটের বাসিন্দা। কাইয়ুমের বিরুদ্ধে হত্যা ছাড়াও ডাকাতি, দুটি ভুয়া তথ্য প্রদানের চার্জ আনা হয়েছে। কাইয়ূমকে ২৮ মার্চ দিনেই বার্কিং সাইড ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে তুলে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে, কাইয়ূম ভুয়া তথ্য দিয়ে বাসায় ঢুকে ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যা করে ইয়াসমীনকে। তবে ইয়াসমীনের সাথে যা ঘটেছে সেটা পুলিশের পরবর্তী তথ্য থেকে জানা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Created with Visual Composer