লিটন-মুশফিকের জোড়া শতকে অন্ধকার থেকে অলোর পথে বাংলাদেশ
লিটন-মুশফিকের জোড়া শতকে অন্ধকার থেকে অলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। মিরপুর টেস্টের সকালটা শুরু হয়েছিলো দুঃস্বপ্নকে সাঙ্গ করেই। কোন রান না করেই ফিরে গিয়েছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসান জয়। মাত্র ২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ শিবিরে তখন দূর্যোগের ঘনঘটা। পুরো মিরপুরের ঝলমলে রোদেও যেন আধাঁর ভরা মেঘ!
সেই অন্ধকার কাটিয়ে দারুণ এক সূর্য হয়েছেন লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম। দূর্দান্ত দুটো শতকে বাংলাদেশকে নিয়ে যাত্রা করেছেন এক আলোকিত নগরে। যেখানে প্রত্যাশা কেবলই একটা নিরপাদ স্কোরের। মিরপুরের মাঠ বহুদিন ধরেই লোস্কোরিং মাঠের ট্যাগ নিয়ে আছে। তাই কোন মতে স্কোরটাকে ৩৫০+ নিয়ে যেতে পারলেই বাংলাদেশ থেকে যাবে আলোতেই।
এলেন, দেখলেন, চলে গেলেন! বলা বাহুল্য, দেখার জন্য যে সময়টা প্রয়োজন, সেটিও অনেকেই পাননি। বলা যায়- এলেন আর গেলেন! মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং প্রদর্শনীকে এক কথায় বলতে গেলে হযবরল। ‘হোম অব ক্রিকেট’ খ্যাত শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রতিটি ঘাসই যেখানে চেনা বাংলাদেশ দলের প্রতিটি ক্রিকেটারের, সেখানে তারাই কীনা বুমেরাং করে বসলেন। সকালের সেশনেই মেরুদণ্ড ভেঙেছে স্বাগতিকদের।
চট্টগ্রাম টেস্ট নিষ্প্রাণ ড্র করার পর ঢাকায় ফিরে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ছিল অধিনায়ক মুমিনুল হকের দলের। মিরপুরের টস ভাগ্যটাও কথা বলে স্বাগতিকদের হয়ে। আইসিসির চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলের উপস্থিতিতে যেখানে নিজেদেরকে মেলে ধরার তাড়না, সেখানে হতশ্রী ব্যাটিং বাংলাদেশ দলের। ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে শ্রীলঙ্কান পেসারদের বোলিং তোপে ৫ উইকেট হারিয়েছে টাইগার শিবির। তুলতে পেরেছে মোটে ৬৬ রান।
ধসের শুরুটা হয় তরুণ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়কে দিয়ে। ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই ফেরেন এই ডানহাতি। লঙ্কান একাদশে সুযোগ পাওয়া কাসুন রাজিথার বলে বোল্ড হন জয়। লেংথ বলটি পেছনে গিয়ে খেলতে চান তিনি, কিন্তু পা আটকে থাকে ক্রিজেই। একটু দেরিও করেন খেলতে। তার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল ছোবল দেয় স্টাম্পে। ধারাভাষ্যকার আতহার আলি খান চিৎকার করে বলেন; নাথিং, নো মুভমেন্ট অ্যাট অল। জয় ফেরেন শূন্য রানে।
দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে আরেক ওপেনার তামিম ইকবাল। তিনিও খুলতে পারেননি রানের খাতা। আসিথা ফার্নান্দোর লেগ-মিডলে থাকা বলটিতে ফ্লিক করার চেষ্টা করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু শরীরের ভারসাম্য খানিকটা হারিয়ে ব্যাট চালিয়ে দেন আগেই। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় পয়েন্টের দিকে। ডানদিকে ফুল লেংথ ডাইভে দারুণ ক্যাচ নেন প্রাভিন জয়াবিক্রমা। অথচ চট্টগ্রামে তামিম-জয়ের ওপেনিং জুটি থেকেই এসেছিল ১৬২ রান।
দুই ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট হওয়ায় লজ্জার রেকর্ডের সঙ্গী হয় বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের পর আবার টেস্টে দুই ওপেনার ফেরেন কোনো রান না করেই। বাংলাদেশ দল এমন ঘটনার সাক্ষী হলো তৃতীয়বার। তিনবারই নাম আছে তামিমের। আজকের আগে সবশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ০ রানে আউট হয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। তার আগের ঘটনাটি ছিল ২০১০ সালে।
দুই ওপেনারের ব্যর্থতায় যেখানে দায়িত্ব নিয়ে খেলার উচিৎ ছিল অধিনায়ক মুমিনুলের, সেখানে আবার ব্যর্থ তিনি। ফিরলেন ৯ রানে। ফার্নান্দোর অফ স্টাম্পে পিচ করে অ্যাঙ্গেলে বেরিয়ে যাওয়া বলটি অনায়াসেই ছেড়ে দিতে পারতেন মুমিনুল। খেলবেন কী ছাড়বেন এ ভেবে শেষ মুহূর্তে ব্যাট পেতে দিলেন। ব্যাটের নিচের অংশে আলতো চুমু দিয়ে বল জমা পড়ে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে। এ নিয়ে টানা ৬ ইনিংসে দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই ফিরলেন মুমিনুল।
আক্ষেপে বাড়িয়েছেন তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। রাজিথার রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে ছোড়া বলে বিভ্রান্ত হন শান্ত। পা বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে বলের লাইন হারান এই বাঁহাতি, ব্যাট-প্যাডের মাঝের ফাঁক গলিয়ে বল গিয়ে আঘাত করে স্টাম্পে, ৮ রানে ফেরেন শান্ত। পরের বলেই সাজঘরে সাকিব আল হাসান। ইনিংসের সপ্তম ওভারে রাজিথার অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে ভেতরে ঢোকা বল সাকিবের পায়ে গিয়ে আঘাত করে। রিভিউ নিয়েও ফেরেন সাকিব।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেট হারিয়ে ২৬৯। লিটন দাস ব্যাট করছেন ১২৮ রান নিয়ে অন্যদিকে মুশফিকুর রহিম ব্যাট করছেন ১১২ রান নিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ ২৬৯/৫
লিটন দাস ১২৮*
মুশফিকুর রহিম ১১২*