শুধু গোলটাই পাননি ‘ম্যাচসেরা’ মেসি

লিওনেল মেসি বল পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, আর পেছনে-সামনে থেকে তাকে আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা ইতালিয়ান ডিফেন্ডারদের। এমন একটা দৃশ্য ম্যাচের প্রথমার্ধেই ছড়িয়ে পড়েছিল আন্তর্জালে। সেই দৃশ্যটা দ্বিতীয়ার্ধে না দেখা গেলেও, মেসির পা থামেনি শেষ ৪৫ মিনিটে। গোল করিয়েছেন, সুযোগ বানিয়েছেন, বল জিতেছেন, প্রতিপক্ষ আক্রমণ আটকেছেন। মেসি কেবল গোলটাই পাননি।

তবে তাতে হয়তো মেসি কিছু মনেও করবেন না! ইতালির বিপক্ষে তার দল আর্জেন্টিনা যে জিতে গেছে ৩-০ গোলে! জয়ে বড় অবদান রাখায় গোল না করেও ম্যাচসেরার পুরস্কারটা বগলদাবা করেছেন মেসি।

ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে এ পর্যন্ত মেসি খেলেছেন দুটো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। যার প্রথমটা ছিল একটা ফাইনালে। ২০১১ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে সেদিন এক গোল করেছিলেন, আরও একটার সুযোগ এসেছিল তার পা থেকেই। সে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা বগলদাবা করেছিলেন তিনি। এরপর ২০১৮ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টটেনহ্যামের বিপক্ষেও জোড়া গোল করে, সুযোগ বানিয়ে দিয়ে ম্যাচের সেরার খেতাবটা জিতেছিলেন তিনি। ওয়েম্বলি যে তাই মেসির প্রিয় মাঠের একটা, তা বলাই বাহুল্য!

প্রিয় মাঠে আজও তিনিই ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিলেন। ম্যাচের শুরুটা দুর্দান্তভাবে করে পারফর্ম্যান্স কিছুটা যেন নেমে গিয়েছিল আলবিসেলেস্তেদের। তাতে ইতালিও বেশ চোখরাঙানি দিচ্ছিল লিওনেল স্ক্যালোনির দলকে। তখনই এলো মেসির জাদুকরী সেই মুহূর্ত। জিওভানি ডি লরেঞ্জোর কড়া পাহাড়া পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকে তিনি বল বাড়ান লাওতারো মার্টিনেজকে। সহজ ট্যাপ ইনে গোলটা করতে ভোলেননি স্ক্যালোনির আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা। সেই যে ম্যাচে পিছিয়ে পড়ল ইতালি, আর কখনোই মনে হয়নি, আজ ইতালি জিততে পারে, কিংবা নিদেনপক্ষে ম্যাচে ফিরতে পারে। বিরতির আগে ডি মারিয়ার দারুণ গোলে ব্যবধানটা ২-০ হলো।

দ্বিতীয়ার্ধে মেসি আরও ক্ষুরধার। শুরুর অর্ধে কেবল গোলটাই করিয়েছিলেন। বিরতির পর মেসি নিজেই প্রতিপক্ষ গোলমুখে ত্রাস ছড়াচ্ছিলেন। জিয়ানলুইজি ডনারুমা যদি অতিমানব না হয়ে যেতেন, তাহলে হয়তো গোলটাও পেয়ে যেতেন আলবৎ। সেটা হয়নি, মেসির দুটো দারুণ শট ঠেকিয়েছেন তারই পিএসজি সতীর্থ। তাই গোলের দেখাটা পাননি মেসি।

শেষ বাঁশির একটু আগে ইতালি গোলমুখে এগোচ্ছিলেন, তবে সামনে বাধা দেখে বলটা বাড়িয়ে দেন পাওলো দিবালাকে। তার দারুণ ফিনিশে আর্জেন্টিনা পেল তৃতীয় গোলের দেখা। মেসি করালেন দ্বিতীয় গোল।

দুটো গোল করানো আর গোলমুখে শট বাদেও মেসি আলো ছড়িয়েছেন পুরো ম্যাচে। পুরো ম্যাচে বল ছুঁয়েছেন ৯৮ বার। বারদুয়েক লম্বা বল বাড়িয়ে আক্রমণ শুরু করেছেন। বড় সুযোগ সৃষ্টি করেছেন চারটি। তাকে প্রতিপক্ষ ফাউল করেছে ৫ বার। শুধু আক্রমণেই নয়, রক্ষণেও দলকে সাহায্য করেছেন বেশ। একবার ট্যাকলে জর্জিনিওর কাছ থেকে বলও জিতেছেন তিনি। এমন পারফর্ম্যান্সের পর ম্যাচসেরার পুরস্কারটা আর না জেতেন কী করে মেসি? জিতলেন, তাতে ফাইনাল শেষে দারুণ সুখস্মৃতি নিয়েই লন্ডন ছাড়ছেন মেসি, গোল না করেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Created with Visual Composer