চট্টগ্রাম আদালত ভবন ও আইনজীবী ভবন সমূহে যাতায়াত নির্দেশিকা

চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালী থানাধীন বাংলাদেশ ব্যাংক, নিউ মার্কেট, জহুর হকার্স মার্কেট ও মুসলিম হাইস্কুল বেষ্টিত একসময়ের পরীর পাহাড় বর্তমানে কোর্টহিল নামেই চট্টগ্রাম সহ দেশব্যাপী পরিচিত। আদালত ভবন, রেজিস্ট্রি অফিস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সহ অধিকাংশ প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় কোর্টহিল থেকে। তাই সপ্তাহের ৫ দিন সেবা প্রার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে থাকে কোর্টহিল এলাকা।

রেজিস্ট্রি অফিস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংক্রান্ত সেবা গ্রহীতারা একই জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় অফিসে সহজে যাতায়াত করতে পারলেও আদালত ভবন এবং আইনজীবী ভবন অধিক হওয়ায় বিচার প্রার্থীদের স্ব স্ব আদালতে এবং আইনজীবীর চেম্বারে গমনের জন্য বেশ দূর্ভোগ পোহাতে হয়। কোর্টহিলে এসে সেবা প্রার্থীরা যাতে সহজেই আদালত ভবন ও আইনজীবীর চেম্বারে গমন করতে পারে, সেজন্য একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

বেশ কয়েকটি ভবন মিলে আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। একই ভাবে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির অধীনে ৫টি ভবন আছে, যেখানে আইনজীবীদের চেম্বার অবস্থিত। তাই একজন আইনগত সেবা প্রার্থীকে শুরুতেই জেনে নিতে হবে, তিনি কোন আদালতে কিংবা কোন আইনজীবীর কাছে যাবেন। কোর্টহিলে উঠার জন্য মুসলিম হাই স্কুলের পশ্চিমের রাস্তা ও জহুর হকার্স মার্কেটের পূর্ব গেইটের পার্শ্বে মহল মার্কেটের সামনের রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। এই দুইটি রাস্তা ব্যতীত কোর্টহিলে গাড়ী নিয়ে উঠার জন্য অন্য কোন রাস্তা নেই। এই দুই রাস্তা দিয়ে উপরে উঠার পরই প্রয়াত বিজ্ঞ এডভোকেট বদিউল আলম স্মারক ব্রিজ চোখে পড়বে। উত্তর দক্ষিণ প্রলম্বিত ব্রিজের দুই পাশ থেকেই মূলত আদালত ভবন এবং আইনজীবী ভবনগুলোর অবস্থান শুরু।

আইনজীবী ভবন সমূহের অবস্থান
সেবা প্রার্থীরা ভবনের নাম, চেম্বার নাম এবং আইনজীবীর নাম একত্রে না জানায় তিনি যে ভবনে যাবেন, তার বদলে অন্য ভবনে উঠে হয়রানির শিকার হন। আইনজীবী ভবনে কাঙ্খিত চেম্বার খুঁজে পেতে তাই সেবা প্রার্থীদের কোন ভবনে উঠার আগেই কাঙ্খিত ভবনের নাম ও চেম্বার নাম্বার জানা জরুরী।

বদিউল আলম স্মারক বিজের পূর্বে অর্থাৎ মুসলিম হাই স্কুলের সামনে থেকে কোর্টের রাস্তায় ঢুকেই সামনে “আইনজীবী দোয়েল ভবন” অবস্থিত। উক্ত ভবনে ২য় তলা থেকে ১০ম তলা পর্যন্ত চেম্বার আছে। দোয়েল ভবনের পাশেই আইনজীবী এনেক্স ভবন-২ অবস্থিত। আইনজীবী এনেক্স ভবন-২ এর পাশেই আইনজীবী ভবন (প্রকাশ সোনালী ব্যাংক ভবন) অবস্থিত। এটি আইনজীবীদের চেম্বার ও সমিতির অফিসের জন্য নির্মিত প্রথম ভবন। উক্ত ভবনের সামনে কোর্টহিলের কেন্দ্রীয় মসজিদ অবস্থিত। আইনজীবী ভবনের দক্ষিণে আইনজীবী এনেক্স-১ ভবন অবস্থিত। তৎপর আইনজীবী শাপলা ভবন অবস্থিত।

সহজে আইনজীবীর চেম্বার খুঁজে পেতে তাই সেবা প্রার্থীকে শুরুতেই আইনজীবী কিংবা তাঁর সহকারী থেকে ভবনের নাম জানা জরুরী। তারপর চেম্বারের নাম্বার। ভবনের নাম জিজ্ঞাসা না করে শুধুমাত্র চেম্বার নাম্বার জেনে আসলে, সেবা প্রার্থীকে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। কেননা একাধিক ভবনে একই নাম্বারের চেম্বার আছে। তাই আইনজীবী কিংবা সহকারীর সাথে কথা বলার পর ভবনের নাম ও চেম্বার নাম্বার, দুটোই জেনে আসা জরুরী।

দেওয়ানী আদালত ভবন
প্রয়াত এডভোকেট বদিউল আলম স্মারক ব্রিজের উত্তরে দেওয়ানী আদালত-নারী শিশু ভবন অবস্থিত। চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতের অধীনে সকল দেওয়ানী আদালত উক্ত ভবনে অবস্থিত। সেই সাথে উক্ত ভবনে নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৪,৫,৬ অবস্থিত।

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন প্রকাশ নতুন ভবন
বদিউল আলম স্মারক ব্রিজের সাথে সংযুক্ত ব্রিজ দিয়ে উপরে উঠে মহানগর দায়রা জজ আদালত ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গমন করতে হয়। এটি নতুন ভবন নামেও ব্যাপক পরিচিত। উক্ত ভবনে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সহ অধীনস্থ সকল আদালত অবস্থিত। জেলা জজ আদালতও উক্ত ভবনে অবস্থিত। একইভাবে মহানগর দায়রা জজ আদালত ও অধীনস্থ সকল আদালত অবস্থিত। এছাড়াও উক্ত ভবনে অর্থঋণ আদালত, জননিরাপত্তা আদালত, দেউলিয়া বিষয়ক আদালত, দ্রুত বিচার আদালত, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ও বিভাগীয় স্পেশাল আদালত অবস্থিত। এছাড়াও উক্ত ভবনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ অবস্থিত।

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও লিগ্যাল এইড অফিস প্রকাশ লাল ভবন
কোর্টহিলের সর্বপশ্চিমে সিএমএম আদালত ভবনের সাথে সংযুক্ত নব নির্মিত লাল ভবন তথা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও অধীনস্থল সকল আদালত অবস্থিত। উক্ত ভবনে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অধীনস্থ সকল আদালত অবস্থিত। এছাড়াও উক্ত ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় লিগ্যাল এইড অফিস, ৫ম তলায় সাইবার ট্রাইব্যুনাল, বিদ্যুৎ আদালত অবস্থিত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১,২,৩ অবস্থিত।

জেলা প্রশাসক ভবন
সিজেএম ভবনের সামনে মাননীয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তথা জেলা প্রশাসক ভবন অবস্থিত। উক্ত ভবনে পরিবেশ আদালত, এডিসি রেভিনিউ আদালত, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (মহানগর) অবস্থিত। জেলা প্রশাসকের ভবনের সামনে স্থিত শহীদ মিনারের দক্ষিণে টিনশেড গৃহ সমূহে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উত্তর-দক্ষিণ অবস্থিত।

উল্লেখ্য যে, জেলা প্রশাসক ভবন বৃটিশ আমলে তৈরী দৃষ্টিনন্দন ভবন। প্রাচীন দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ভবন। আইনগত সেবা প্রার্থীরা অবসর সময়ে জেলা প্রশাসক ভবনের সামনে থেকে ভবনটি মনোমুগ্ধ নয়নে অবলোকন করেন। সেবা প্রার্থীক ছাড়াও ভ্রমন পিপাসু অনেকেই প্রতিদিন কোর্টহিলে ছুটে আসেন জেলা প্রশাসক ভবন সহ কোর্টহিলের সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে।