বিয়ে সহজ করি

জন্ম, বিয়ে আর মৃত্যু- বলা হয়ে থাকে এই তিন বিষয়ে কারো হাত নেই। এ তিন বিষয়ই নিয়তি বা ভাগ্য দ্বারা পূর্ব নির্ধারিত। জোতিষশাস্ত্র মতে মানুষের ভাগ্য বা নিয়তি হলো দশ ভাগ আর নব্বই ভাগ হলো তাঁর চেষ্টা। আল্লাহ বলেছেন যে জাতি তার ভাগ্যের পরিবর্তনে চেষ্টা করে না আল্লাহ সে জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন সাধন করেন না। লাইছা লিল ইনছানি ইল্লা মা সাত্তা- মানুষ চেষ্টা ছাড়া কিছুই পেতে পারে না।

এটা আমরা সবাই জানি যে আমাদের চাওয়া না চাওয়া দিয়ে আমরা আমাদের জন্ম বা অতীত বদলে দিতে পারব না। কিন্ত বর্তমান তো আমাদের চেষ্টার চাষক্ষেত্র হতে পারে। সংগতই অতীত অপরিবর্তনীয়, কিন্তু বর্তমানের নিরলস প্রচেষ্টা ভবিষ্যত উন্নতির ভিত্তি। জন্মে হাত না থাকতে পারে, কিন্তু মৃত্যুকে গ্লোরিফাইড করার চেষ্টা করা যায় মঙ্গলময় কর্মের দ্বারা। সাধারণ জীবনচক্রে জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় হলো বিয়ে। আজ বিয়ে নিয়ে বলব।

বিয়ে দেওয়ার আগে মেয়েদের মতামত নিতে হবে কি?

দুই
প্রথমেই বলব আসুন বিয়েকে সহজ করি। সন্তান বিবাহযোগ্য হলে বিয়ের উদ্যোগ নিন। অনেক পাপ নিবারণ করা সম্ভব শুধুমাত্র সময়মতো সন্তানদের বিয়ে সম্পন্ন করার মাধ্যমে। অনেকেই যুক্তির ধার দেখিয়ে বলতে পারি যে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগে আবার বিয়েসাদি কিসের। আপনার সন্তান কবে নিজের পায়ে দাঁড়াবে আপনি কি জানেন? সমাজে ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে বিয়ের পর জীবনে সফল হবার- বিপরীতও যে নেই তা বলব না। তবে গবেষকরা মনে করেন ২০ ও ৩০ বছরের মাঝামাঝি বিয়ে করাটাই উত্তম। এই সীমার আগে করলে বেশি তাড়াতাড়ি হয়ে যায় আর এর পরে করলে বেশি দেরি হয়ে যায়।মনোচিকিৎসক আহমেদ হেলাল এ বিষয়ে বলেন, ‘মূলত বিয়ের জন্য বয়সটা গুরুত্বপূর্ণ না, শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতিটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা হলফ করে বলা সম্ভব না যে, যেহেতু আজ ১৭ বছর ১১ মাস ২৯ দিন হয়েছে সেহেতু কাল আপনার বিয়ের বয়স হবে। বিজ্ঞান বলে, ১৮ বছর বয়স হলে মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়। তাই এই বয়সকে আমি বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স মনে করি।’ সমাজের অনেক অনাচারের মূলে যেমন আছে নৈতিক ও পারিবারিক শিক্ষার অভাব, তেমনই আছে সন্তানদের জীবনঘড়ির ডাকে পিতামাতার সাড়া দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অনেক নয় ছয় চিন্তা করে সময়কে দূর সময় পর্যন্ত প্রলম্বিত করার কুপ্রভাব। আসুন শুধু যোগ্য ছেলের কথা চিন্তা না করে যোগ্য মেয়ের কথাও চিন্তা করি। আসুন বিয়ের পর ছেলে কী করে খাওয়াবে একথা জিজ্ঞেস না করে বলি বিয়ের পর ওরা কী করে খাবে। আসুন দাম্পত্য জীবনের দায়িত্বের দিকটা এক পাক্ষিকভাবে চিন্তা না করি।

তিন
বিয়েসাদিতে শো-অফ করার সামাজিক ব্যাধি বিয়ে বিষয়টাকে অনেক জটিল করে ফেলেছে। সবচেয়ে উত্তম বিয়ে হচ্ছে কম খরুচে বিয়ে। অস্বাভাবিক দেন মোহর ধার্য করা অনেক পাত্রের জন্য ভয়াল গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। অধিক দেন মোহর ধার্য আপনার মেয়ের সংসার টিকার কোনও নিশ্চয়তা বা সুখি হবার গ্যারান্টি নয়, বরং ক্ষেত্রবিশেষে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হতে পারে। আর যদি যৌতুক প্রসঙ্গে আসি তো বলতে হবে যৌতুক প্রত্যাশী কোন ভিক্ষুক যতই অর্থবিত্তের অধিকারীই হোক তারা বিয়ের আগে বা পরে কোনদিনই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না।
দেশের একজন খ্যাতিমান সঙ্গীত শিল্পী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ” বদমাইশি করার চেয়ে বিয়ে করা ভাল”।

শেষ
বিবাহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন বয়সের কথা ইসলাম বলে নি। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ বলেছেন, “হে যুবসমাজ তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিবাহ করা কর্তব্য। কেননা বিবাহ হয় দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন রোজা পালন করে। কেননা রোজা হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম।” (বুখারী ৫০৬৫; মুসলিম ১৪০০)।
আসুন, বিয়েকে সহজ সাধ্য করে তুলি।

লেখকঃ মাহবুবুর রহমান
ডেপুটি কমিশনার অব ট্যাক্সেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Created with Visual Composer