রুচির দুর্ভিক্ষ এবং পুঁজিবাদের কাছে রুচিবোধের পরাজয়

ছোটবেলায় বাংলা সিনেমা দেখানোর নামে একটু পর পর টানা ৪০ টা বিজ্ঞাপন দিতো। মানে জোর করে গিলতে বাধ্য করত। কারণ অপশন একটাই, তা হলো বিটিভি। বাংলাদেশের মানুষ এখন আর হলে গিয়ে সিনেমা দেখেনা তেমন। ভালো কোন মুভি রিলিজ হলে তখন যায়, অনেকটা সিজনাল টাইপ আর কি।

সিনেমা হল কে টেক্কা দিয়ে আসল ওয়েব সিরিজ প্লাটফর্ম। নতুন সিনেমা ঝকঝকে প্রিন্ট, ঘরে শুয়ে ত্যারা বাকা হয়ে দেখেন, মন চাইলে পজ করেন, একটু দেখার পর ভালো না লাগলে চেঞ্জ। কারণ এটা বিটিভি না।

সেই সঙ্গে আছে টিকটক। এক শ্রেণীর মানুষের কাছে এটা খুব জনপ্রিয়। অনেকেই শখ করে টিকটকে ভিডিও বানায়, সময় কাটায়। টিকটক কে টেক্কা দিতে ফেসবুক চালু করেছে রিল ভিডিও। ফেসবুক জোর করে রিল ভিডিও গিলতে বাধ্য করায়

আবার শব্দের সামান্য তারতম্য কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড এর নামে ব্লক মারে সতর্ক করে, কত ভালো। এইগুলো হলো Double Conscious.সমাজ বিজ্ঞানী E.B. Dubois এই দুটো বিষয় কে নিয়ে বিস্তর লিখেছেন।

পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে মানুষের ন্যাচারাল অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন থমাস হবস। মুলত এরপর বিস্তারিত বলেছেন কার্ল মার্কক্স, তাকে অনুসরন করেছেন ম্যাক্সওয়েবার। তিনি সমাজতত্ব ও বুরোক্রাটিক সিস্টেম কে নিয়ে নানা আলোচনা করেছেন।

পুঁজিবাদ সমাজে এত সব কিছুই চলে লাভ ক্ষতির হিসাবে। এই পুঁজিবাদের সাথে আছে গণতন্ত্র ও বুরোক্রাটিক সিস্টেম। ফলে কিছু মানুষ অতি সুবিধা পায় আর বাকিরা কার্ল মার্ক্সের ক্লাস শ্রেণিতে পড়ে হায় হুতাশ করর মাঝেমধ্যে বর্ষাকালের ব্যাঙের মত বিল্পবের ডাকা দেয়। আচ্ছা, বলতে পারেন ব্যাঙের ডাক কেন?

উদাহরণ টা আমার নিজের। এত কিছু পরেও কেন মানুষ রাজপথে নামে না? কারণ হলো সমাজ ব্যবস্থা সুপার স্ট্রাকচারের উপর নির্ভরশীল। মানে সব কিছুই অর্থনীতি কেন্দ্রীক। হিসাব বুঝে নেন। কালচার ইন্ড্রাস্ট্রিতে ডমিনেশন বলে একটা ব্যাপার আছে।

নতুন মার্কক্সবাদী Herbert Marcurse তার লেখায় বলেছেন, Millions of viewers devote several hours a week to watching people compare with one another to win money, they need without having to work for it or be players in the capitalist economic system. Instead of rebelling against the capitalism, viewer daydream about they what they do with all that money” ( Ritzer, page 121)

মানুষ যখন দেখে চিপাচুপা দিয়ে বড় লোক হওয়া যায়, ক্ষমতার চেয়ারে বসে হাজার কোটি টাকা পাচার করা যায়, কাজ না করেই এভাবে উপার্জন করা যায়, তখন আর কেউ সিস্টেমের পরিবর্তনের কথা বলে না, প্রতিবাদী, বিপ্লবী কিংবা বিদ্রোহী হয়ে উঠেন না। তার বদলে সে  নিজেই সিস্টেমে ঢুকে যায়।

কার্লমার্ক্স যতই সুন্দর কথা বলেন না কেন তার সাথে আপনার দু:খ কষ্ট মিলে যাক না কেন, গলা ধরে কান্নাকাটি করেন না কেন, দিনশেষে পুঁজিবাদের চিপায় আপনিও ঢুকে যাবেন।

নাটব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ সাহেব যতই রুচির কথা বলেন না কেন, হিরো আলমরা পুঁজিবাদের কালচার ইন্ড্রাস্ট্রিতে হ্যামিলনের বাশিওয়ালা এখন। এই নিদারুণ বাস্তবতা আমাদেরকে মানতেই হবে।

লেখকঃ  মোঃ রেজাউল করিম, সহকারী অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট, ওয়েস্টার্ন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকা