সবকিছুতেই পরিবর্তন আসছে শুধু পরিবর্তন আসছে না নীতি-আদর্শে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সমাজের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হয়ে উঠেছে। আমি ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। স্ট্যাটাসটি হলো, “দেশে খোঁজা হচ্ছে কে কয় বেলা গরুর মাংস দিয়ে খেয়েছে, অথচ এই দেশেই একটা সময় খোঁজা হত কে কয় বেলা ভাত খেয়েছে।” এই প্রেক্ষিতে আমার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কিছু অনুভূতির কথা শেয়ার করতে যাচ্ছি। প্রথমেই বলে নিচ্ছি আমি খুবই ন্যায্যভাবে সাধারণ জীবন যাপন করি ও আর্থিকভাবে নিম্নমধ্যবিত্ত বলা যেতে পারে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি করি। আমার মা-বাবা বাড়ীতে থাকেন। আমার মা অসুস্থ থাকায় বেশ কিছুদিন যাবৎ হণ্যে হয়ে একজন গৃহাস্থালী কাজের সহযোগি খোঁজা হচ্ছে। এলাকা তুলনায় বেতন যথেষ্ট, খাবার ও কাপড় প্রদান করা হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি একজন মানুষও পাওয়া গেল না। কতজনকে রিকোয়েস্ট করেছি কিন্তু সবাই না বলে দিয়েছে।
আমাদের বাড়ীতে প্রায়শই প্রতি বৃহস্পতিবার যারা ভিক্ষা করতে আসত তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হতো। একটা সময় হুমরি খেয়ে পরলেও বর্তমানে আগে জিজ্ঞেস করে নেয়, রান্না আইটেমগুলো কি হতে পারে! আগে কিন্তু এই প্রশ্ন কেউ করত না। তখন খাবার একটা হলেই হতো। কতজনকে বলতে শুনেছি, দেন মা যা আছে তাই দেন। পান্তা পেয়াজ হলেই হলো। গ্রামের বাড়ীতে দেখেছি, শুধু দু-বেলা খাবারের নিশ্চয়তাই বাড়ীতে তেমন কোন কাজ না থাকলেও হুদায় এককাজে লেগে পরত। কাজে লেগে পরলে তো আর না খাবার দিয়ে উপায় নেই।
একটা দুঃখজনক কথা বলি। গত কিছুদিন আগে একজন দরিদ্র মহিলা আমাদের বাসায় এসে খাবার খেতে চাইল। ঐসময় আমরা খেতে বসেছিলাম। মা কোন কথা না বলে, তাকে প্লেটে করে কিছু ভাত ও তরকারী দিলেন। আমরা খাচ্ছি, খাবার শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমারও খাবার প্রায় শেষ। কিন্তু তার শেষ হয় না। এক পর্যায়ে বলতেছে, কাকি, আপনাদের ভাতের চাল অনেক মোটা। এত মোটা ভাত তো আমি খাইতে পারি না। আমি বললাম, একটু কষ্ট করে খেয়ে ফেল। এই কথা বলে আমি উঠে যাবার সাথে সাথে ভাতগুলো ডাস্টবিনে ফেল দিল। আমি শুধু দেখলাম কিছু বললাম না। কিন্তু মনটা খুব খারাপ হলো। কিছু ব্যক্তিগত কথা বলে ফেললাম। অন্যভাবে নিবেন না।
আসলে আমাদের বাঙালীদের অল্প একটু পুঁজি হতে না হতেই চাহিদা ব্যপক পরিবর্তন হয়ে যায়। কোন কিছুই আর স্বাভাবিক রাখতে পারি না। দেশে নিঃসন্দেহে একটা ক্রাইসিস চলছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে অসাধু কিছু ব্যক্তির কারসাজি। আর উৎপাদনশীল কর্মকান্ডে ব্যপক অনীহা। বিশ্বজুড়ে করোনার প্রভাব, রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে টালমাটাল পুরো বিশ্ব। পুরো বিশ্বই বুঝতে পারছে না পৃথিবীটা কয় মেরু সমৃদ্ধ হবে অথবা কোন দেশ কোন মেরুতে অবস্থান নিবে। একটি দেশের সাথে আরেকটি দেশের বিনিময় কারেন্সি কী ধরনের হবে। এমতাবস্থায় নিজস্ব উৎপাদনের উপর দাড়ানো খুবই চ্যালেঞ্জ।
জনগণের কাছে আজকে যে ম্যাসেজ থাকে, একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেই ম্যাসেজ আরও তিনমাস আগেই থাকে। প্রধানমন্ত্রী নিজে স্বীকার করেছেন, বিশ্বব্যাপী ও নিজের দেশে ক্রাইসিসের কথা। বারবার তাগাদা দিচ্ছেন এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলেছেন। কিন্তু আমাদের সাহেবরা তো সেই কথা শুনেন না। যার ফলে ক্রাইসিস বাড়ছে। এইসব ক্রাইসিসকে পুঁজি করে আরেক ধরনের অসাধু ব্যক্তি নানান ধরণের কারসাজি করে নিত্য পণ্যের বাজার যেমন বেসামাল করেছে, তেমনি জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। নিঃসন্দেহে একটা কঠিন সময় আমরা অতিবাহিত করছি। তবে সামনে হয়ত আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। যখন দ্রব্যমূল্যর উর্ধ্বগতি হয়, তখন সেই চাপ আপনার উপরও যেমন, আমার উপরও তেমন। অবশ্যই আমরা একটা বিপ্লব করব। সেটা অবশ্যই দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং উৎপাদনের পক্ষে। সেইদিন আমি আপনি সবাই এক হয়ে যাব।