এনামুল হক বিজয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ক্রমেই হতে চলেছেন আক্ষেপের এক বড় নাম। ওয়ানডে ক্রিকেটে এবং লিস্ট এ ক্রিকেটে গত দুই তিন বছর ধরে অমন ধারাবাহিক পারফর্ম করেও দলে থিতু হতে পারছেন না। কেন পারছেন না সেসব খুটিনাটি নিয়েই লিখেছেন- সালমা রিয়া

কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়? কতটা পথ পেরোলে পাখি জিরোবে তার ডানা? কতটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়? কবির সুমনের মত করে এনামুল হক বিজয় হয়তো ভাবছে আর কত রান করলে তবে দলে ফেরা যায়? আর কত রান করলে তবে, নির্বাচকদের মন জেতা যায়!

অ-১৯ থাকাকালীন সময়ে ক্রিকেট পড়ায় নজর কেড়েছিলেন।দেশের জার্সিতে শুরুটাও মন্দ হয়নি। ৩৮ ম্যাচে ৩ শতকের সাথে ৮ অর্ধশতকে মোট রান করেছে ১৩২৬ । তামিম, কিংবা লিটনের প্রথম ৩৮ ম্যাচ ক্যালকোলেশন করলে সবার থেকে ডের এগিয়ে বিজয়। ক্যারিয়ারের শুরুটা দেখে অনেকে হয়তো স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন এই ছেলে লাল-সবুজের পতাকাকে নিয়ে যাবে অনেক উঁচুতে। কিন্তু ভাগ্য বিধাতা গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন ইঞ্জুরি নামক ভয়াল থাবা দিয়ে। যে ইঞ্জুরি শুধু বিজয়কে নয়, ছিটকে দিয়েছে বিজয়ের পুরো ক্যারিয়ারটাকে। সেদিন ইঞ্জুর না হলে হয়তো হতে পারতেন দেশ সেরা ওপেনারদের একজন। হতে পারতেন তামিম ইকবালের স্থায়ী যোগ্য একজন সঙ্গী।

ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানো বিজয় শুরুতে যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছেন তেমনি স্ট্রাইকরেট,ফুটওয়ার্কের জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন কেউ কেউ দলের ইমপ্যাক্ট নিয়েও প্রশ্ন তুলছিলেন, নিন্দুকের চোখে বিজয় দলের জন্য নয় বারোং নিজের জন্য খেলেন। দল থেকে ছিটকে গিয়ে ততোদিনে বিজয় বুঝে গিয়েছে পরিশ্রমের বিকল্প কিছুই নেই।

নামটা যার বিজয় সে কি পরাজয় এত সহজে মেনে নিতে পারে! দিন যাচ্ছে বিজয়ও জয়ী হতে মরিয়া হয়ে উঠছে। নিজেকে ভেঙে আবার নতুনরূপে গড়েছেন,কাজ করেছে নিজের দুর্বলতা নিয়ে। বিজয় হয়তো মনে মনে বলে উঠেন নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো, যুগ জনমের বন্ধু আমার আধার ঘরের আলো !বিজয়রা ব্যার্থ হয় বিজয়রা আবার পরিশ্রমকে সঙ্গী করে বাইশ গজের সবুজ গালিচায় ফিরে আসে।পরিশ্রমের ফল হিসাবে গতবছর প্রাইমব্যাংকের হয়ে রের্কড ১১৩৮ রান করে নির্বাচকদের নজড় কেড়েছে। ফলাফল হিসাবে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছে সেখানে নিজেকে প্রমাণে আবারো ব্যর্থ হয়েছে,তবে এখানে বিজয়ের ব্যর্থতার সাথে নির্বাচকদেরও ব্যর্থতার ভার নিতে হবে। বিজয় ভালো করছে ওয়ানডে ফর্মেটে আপনি তাঁকে খেলতে নামিয়ে দিলেন টি-২০ তে ফলে যা হবার তাই হলো বিজয় আবারও দল থেকে ছিটকে গেলো।

বিপিএল থেকে ডিপিএল জার্সি বদলাচ্ছে কিন্তু বিজয়ে রানের ফোয়ারা সমান তালে বয়ে যাচ্ছে।গতবারের নিজের করা রের্কড চলতি সিজনে বোধহয় আবার নতুন করে লিখতে যাচ্ছে আবাহনীর এই ওপেনার প্রথম ৯ ম্যাচে ৮৭.৮৫ গড়ে ৬১৫ রান এসেছে বিজয়ের ব্যাট থেকে স্ট্রাইকরেট অলমোস্ট ১০০ প্লাস। বিজয়ের উপরে আছে কেবলি একজন দল থেকে ছিটকে যাওয়া আরেক ওপেনার নাঈম শেখ।

বিয়জের ব্যাটে রানের এমন উইলো দেখে বিজয় ভক্তরা হাওয়ায় পাল উড়িয়েছেন আয়ারল্যান্ড সিরিজে আশার আলো দেখতে শুরু করেছিলো কিন্তু নির্বাচকরা সেই আলোর রশ্মি খুব বেশিদূর যেতে দেয়নি।বিয়কে থামিয়ে দিয়েছে টি-২০তে ভালো খেলা রনি তালুকদারকে কল করে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেটা সবসময়ই দেখা যায় কেউ একজন এক ফর্মেটে ভালো করলে ম্যানেজম্যান্ট তাকে তিন ফর্মেটে নামিয়ে দেয়। এতে করে কতজনের ক্যারিয়ার আজ হুমকির মুখে।এগুলো নিয়ে ভাবার সময় কি আর নির্বাচকদের আছে!

টি-টোয়েন্টি কিংবা টেস্টে বিজয়কে নিয়ে ভাবনার আপতাত কোন কারণ নেই। সামনে বড় দুইটা টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে তামিম-লিটনের সাথে বিশ্বকাপে ব্যাকআপ ওপেনার হিসাবে বিজয় বোধহয় আরও একটা সুযোগ ডিজার্ভ করে। ইংল্যান্ড সফরের পরপর আফগান সিরিজ তারপর এশিয়া কাপে হয়তো বিজয়ের কপাল খুলতে পারে এগুলোতে যদি সুযোগ আসে এবং নিজেকে প্রমান করতে পারে ব্যাকআপ ওপেনার হিসাবে তামিমদের সাথী হয়ে পাড়ি জমাবে প্রতিবেশী দেশ ভারতে।

একনজরে এনামুল হক বিজয়ের ওয়ানডে ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারঃ
ম্যাচ-৩৮
রান-১৩২৬
গড়- ৩৫.৮৩
শতক-০৩
অর্ধশতক-০৮
সর্বোচ্চ স্কোর-১২৮

পাঠকদের কাছে প্রশ্ন কি মনে হয় এনামুল হক বিজয় কি বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরেক আক্ষেপের নাম হয়ে থাকবে, নাকি নতুন করে কামব্যাকে হিরোর গল্প লিখবে?

আপনার মন্তব্য