রাশিয়াকে পরাজিত করার স্বপ্ন দেখছেন জেলনস্কি!

রাশিয়াকে পরাজিত করার স্বপ্ন দেখছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলনস্কি! কেউ কেউ হেসে উড়িয়ে দিলেও এমন স্বপ্নের কথাই জানিয়েছেন জেলনস্কি। এর পেছনে যে পশ্চিমা দেশগুলো আকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে তা আর কাউকে বলে দিতে হবে না। কেউ কেউ এই লড়াইকে বলছেন ভলোদমির বনাম ভ্লাদিমির পুতিন লড়াই।

টানা তিন মাস ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ কেবল কূটনৈতিক পন্থায় শেষ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে তার আশা, ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে পারে।

অবশ্য চলমান এই শুধুমাত্র ‘আলোচনার টেবিলেই’ চূড়ান্তভাবে স্থগিত হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেনের জাতীয় টিভিতে কথা বলার সময় তিনি এসব কথা বলেন। রোববার (২২ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

রাশিয়া ইউক্রেনে প্রায় তিনমাস ধরে সামরিক অভিযান চালালেও রুশ সেনারা প্রাথমিকভাবে প্রায় পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে হামলা পরিচালনা করে। তবে পরে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী মূল মনোযোগ দেয় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়। মূলত তখন থেকে এই অঞ্চলে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে রুশ সেনারা।

আরও স্পষ্ট করে বললে, রুশ-ভাষী মানুষকে রক্ষা এবং রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষার কথা বলে দোনেতস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত ডনবাস ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। আর এতেই রুশ সেনাদের ব্যাপক গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে ইউক্রেনের এই শিল্প এলাকা।

বিবিসি বলছে, রুশ সামরিক বাহিনী ডনবাসের পুরো লুহানস্ক অঞ্চল দখল করার প্রচেষ্টা আরও জোরদার করায় এখন এই অঞ্চলটির সেভেরোদোনেতস্ক এবং এর আশপাশে প্রচন্ড লড়াই চলছে। এছাড়া দক্ষিণের বন্দরনগরী মারিউপোলে যুদ্ধের সমাপ্তি রুশ সৈন্যদের অন্যত্র মোতায়েন করার জন্য সুযোগ এনে দিয়েছে এবং এর ফলে ইউক্রেনের পূর্বে আক্রমণ আরও জোরালো করতে পারছে দেশটি।

আঞ্চলিক গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেছেন, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী সেভেরোদোনেতস্ককে ঘিরে রেখেছে এবং ধীরে ধীরে শহরটিকে ‘ধ্বংস’ করছে। মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে তিনি জানান, ইউক্রেনীয় সেনারা সম্মুখসমরে ১১টি রুশ আক্রমণ প্রতিহত করেছে।

হাইদাইয়ের দাবি, এসময় রাশিয়ার সামরিক যানবাহনের মধ্যে আটটি ট্যাংক ধ্বংস করা হয়েছে। যদিও তার এই দাবি স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এদিকে বিবিসির সংবাদদাতা জেমস ওয়াটারহাউস বলেছেন, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী আর্টিলারি ও বিমান হামলার পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আরও জোরদার করেছে। লুহানস্ক অঞ্চলে রুশ সেনারা আরও মাইলের পর মাইল নতুন ভূখণ্ড দখলে নিয়েছে এবং সেসব এলাকা থেকে ইউক্রেনীয়রা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধ হলে সংঘাত আরও রক্তাক্ত হবে। তবে এই যুদ্ধ কেবলমাত্র কূটনীতির মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে অবসান ঘটানো সম্ভব। তবে এটি যে খুব সহজ হবে না সেটিও ইঙ্গিত দিয়েছেন জেলেনস্কি। কারণ উভয় পক্ষই কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়।

এর আগে গত মঙ্গলবার কিয়েভের প্রধান আলোচক মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা স্থগিত রয়েছে। এর পরদিন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ অভিযোগ করেন, যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায় না কিয়েভ।

রাশিয়ার একাধিক বার্তাসংস্থা বলছে, মস্কো-কিয়েভের মধ্যে শেষ বৈঠকটি হয়েছিল প্রায় এক মাস আগে, গত ২২ এপ্রিল। এছাড়া যুদ্ধ অবসানের কোনো ইঙ্গিত না থাকায় ইউক্রেনে আরও সামরিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *