রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্মার্ট কূটনীতি

0
2

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের তৎপরতাকে কেন্দ্র করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সূচনা।গত ২৪ ফ্রেবুয়ারি,২০২২খ্রি: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে ইউক্রেনের ওপর সর্বাত্মক সামরিক যুদ্ধ শুরু করেন। যা এখনও চলমান। কয়েক দফা শান্তি আলোচনা ইতোমধ্যে শুরু হলেও কার্যত কোন সফলতা এখনো আসেনি। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ের ভাষ্য মতে, যুদ্ধে প্রায় ৪৯৮ জন রুশ সেনা এবং প্রায় ২ হাজার ৮৭০ জন ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে। প্রায় ২৩ লাখ বেসামরকি লোক পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। অবশ্য রাশিয়া ইউক্রেনের বেসামরিক লোকদের অন্যত্র সরে যাওয়ার সুবিধার্থে চারটি অঞ্চলে সাময়িক যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করে মানবিক করিডোর সুবিধা প্রদান করেছে। যুদ্ধের সার্বিক দিক বিবেচনায় এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে যুদ্ধ দীর্ঘতর হবে। এতে অস্বস্তিতে পড়তে হতে পারে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বলয়কেন্দ্রিক দেশগুলোকে। কেননা দিন যত অতিবাহিত হবে যুদ্বের গতি প্রকৃতির সাথে আন্তর্জাতিক রাজনীতিও পরিবর্তন হবে। এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেন বা রাশিয়াকে নৈতিক সমর্থন দিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিরাজ করতে হবে।বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যুদ্ধে তার নিরপক্ষেতা বজায় রেখে চলেছে।কেননা ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৪১-৫ ভোটে যে প্রস্তাব পাস হয়,তাতে বাংলাদেশ নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে ভোট প্রদানে বিরত ছিল। রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়ের সাথে বাংলাদেশের রয়েছে বাণিজ্যিক সম্পর্ক।এ অবস্থায় বাংলাদেশের ভারসাম্যমূলক কূটনীতি ভবিষ্যতে কূটনৈতিক ঝুঁকি মোকাবেলায় সহায়ক হবে বলা যায়।

প্রতিটি স্বাধীন দেশের রয়েছে পররাষ্ট্রনীতি। জাতীয় স্বার্থ এবং ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে এ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয় । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আদর্শ ও কূটনীতি ছিলো ”সবার সাথে বন্ধুত্ব,কারও সাথে বৈরীতা নয়”। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সেই আদর্শ ও পররাষ্ট্রনীতির উপর ভিত্তি করে বহি:বিশ্বে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবর্তিত হচ্ছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে ২৫ নং ধারায় পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে”রাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তুলবে জাতীয় স্বার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্বা,অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা,আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি,আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্বা এবং জাতিসংঘের সনদে উল্লিখিত নীতিগুলোর উপর ভিত্তি করে এবং সেই নীতির ভিত্তিতে অপরাপর কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ”অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বিরোধ বা যুদ্ধে কোন পক্ষ অবলম্বন না করে নিরপেক্ষ ভূমিকা অবস্থান করে বিরোধ বা সংঘর্ষের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করা বা চাওয়া।

গত ০২ মার্চ,২০২২খ্রি: জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে নিন্দা প্রস্তাবে এক বিশেষ জরুরী সভার আয়োজন করা হয়।যা ১৯৯৭ সালের পর জাতিসংঘের ১১তম বিশেষ জরুরী সভা হিসেবে আখ্যায়িত।সভায় ১৪১টি দেশ রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধে ও নিন্দা প্রস্তাবে জাতিসংঘের পক্ষে ভোট দেয়। এতে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়। এতে রাশিয়া,বেলারুশ,উত্তর কোরিয়া,সিরিয়া,ইরিত্রিয়া প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়।বাংলাদেশ,ভারত,চীন,পাকিস্তান,ইরাক,ইরানসহ৩৫টি দেশ ভোট প্রদানে বিরত ছিল।

দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিকামী দেশ বাংলাদেশ।তাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান এখনও নিরপেক্ষ। কেননা জাতিসংঘ যে নিন্দা প্রস্তার উত্থাপন করা হয় তাতে বাংলাদেশ ভোট প্রদানে বিরত থেকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নিরপেক্ষতার প্রদর্শন করেছে।বাংলাদেশ ভোটপ্রদানে বিরত থাকলেও এ যুদ্ধ পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়।বাংলদেশ মডারেট কূটনীতির দেশ।সবার সাথে বন্ধুত্ব,কারও সাথে শত্রুতা নয় -পররাষ্ট্রনীতির এই মূলনীতিই বাংলাদেশের কূটনীতির দর্শন বলা যায়। এমনকি যুদ্ধরত দেশগুলোকে সমর্থন প্রদানে এই নীতিকে বিবেচনায় নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের আনীত নিন্দা প্রস্তাবে ভোট প্রদানে বিরত থাকায় নিরপেক্ষ দেশগুলোর প্রতি এক ধরণের সন্দিহান ও কূটনৈতিক উদ্বেগ প্রকাশ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। চীনের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সরাসরি ইউক্রেনকে সমর্থন দিবে বলে প্রত্যাশা করছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তার দেশকে সমর্থন করতে প্রকাশ্যে আহ্বানও করেছেন।কিন্তু এটি ভুলে গেলে চলবে না ভারত রাশিয়ার মধ্যেও রয়েছে চিরায়ত সম্পর্ক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ।তাই ভারতের মতো বাংলাদেশও জাতীয় স্বার্থে নিরপেক্ষতা ধরে রেখেছে।এদিকে বাংলাদেশের কূটনৈতিক নিরপেক্ষতার বিষয়টির অবস্থান পরিস্কার করে দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান। তিনি জানান,জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যে প্রস্তাবটি আনা হয়েছে তা যুদ্ধ বন্ধের জন্য নয় বরং নিন্দা প্রস্তাব যা কাউকে দোষারোপ করার সামিল।

সেদিক থেকে বাংলাদেশ স্মার্ট ও দূরদর্শী কূটনৈতিক সিদ্বান্ত নেয়া হয়েছে নি:সন্দেহে বলা যায়। রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় দেশের সাথেই বাংলাদেশের রয়েছে গুরুত্বপূর্র্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক। রাজনৈতিক,বানিজ্যিক ও মুক্তযুদ্ধকালীন ঐতিহাসিক সম্পর্ক দিক বিবেচনায় রাশিয়ার বাংলাদেশের পরম বন্ধু।মুক্তিযুদ্ধকালীন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন তৎকালীন মিত্রবাহিনী প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে রাশিয়া জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল।রাশিয়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীন সত্ত্বা ও অস্তিত্ব বিনিমার্ণে সহায়তা করেছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার কয়েক দশক পর রাশিয়ার সাথে আবারও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক,সামরিক,শিক্ষাসহ সকল ধরনের সহযোগিতামূলক সখ্যতা গড়ে উঠছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বায়নের যুগে অর্থনৈতিক কূটনীতিকে বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থে গুরুত্বারোপ করেছেন। রাশিয়ার অর্থায়নে বর্তমানে মেগা প্রজেক্ট রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যু প্রকল্প ছাড়াও বাণিজ্যিক ও উন্নয়নমূলক অনেক প্রকল্প মধ্যে রয়েছে সম্ভাবনাময়ী গার্মেন্টস পণ্য। যা হতে বাংলাদেশ গত বছরে প্রায় ৬০ কোটি ডলার পণ্য রপ্তানি করেছে। আরেকটি হলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্প -যা রাশিয়ার সহায়তায় বাস্তবায়ন করা হবে।রাশিয়া- ইউক্রেন উভয় দেশ থেকে বাংলাদেশ কৃষিজাত পণ্য গম,ভুট্টা আমদানী করে থাকে। ইউক্রেন থেকে অস্ত্র আমদানী করা হয়। বলা যায় রাশিয়া-ইউক্রেন উভয় দেশের সাথে রয়েছে বাণিজ্যিক গভীর সম্পর্ক। এক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রাথমিকলগ্নে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দক্ষ ও কৌশলী কূটনৈতিক ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ।

সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবস্থায় ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দরে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজ ২৯ জন নাবিকসহ আটকা পড়া গেলে এক জটিল কূটনৈতিক পরীক্ষায় পরে যায় বাংলাদেশ। জাহাজটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়ে একজন নাবিক নিহত হলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার তড়িৎ কূটনৈতিক সিদ্বান্ত গ্রহণ করে জাহাজে আটকে পড়া বাকী ২৮ জন নাবিককে উদ্বার করে রোমানিয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে হয়।এতে বাংলাদেশ যুদ্ধাক্রান্ত দেশে তার কূটনৈতিক কার্যক্রমের সফলতা দেখিয়েছে বলা যায় নি:সন্দেহে।

বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে সার্বিক সজাগ থাকতে দিকনির্দেশনা দেন।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭২’র সংবিধানে যে পররাষ্ট্রনীতি মূলনীতি গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতা স্থাপনে অবদান রেখে গিয়েছেন, তারই উত্তরসূরী হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও কৌশলগত নিরাপত্তা রক্ষায় সদা তৎপর। তাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশ কূটনৈতিক ভারসাম্যতাকে গুরুত্ব দিবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অপরাপর দেশগুলো এক ধরনের চাপের মধ্যে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার বলয় হলো এ চাপের মূল উদ্বিগ্নতার উৎস।তবে এটি সত্য,প্রতিটি দেশ তার জাতীয় স্বার্থ,ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা,নিরাপত্তা,রাজনৈতিক ,অর্থনৈতিক ও সামরিক কৌশলকে বিবেচনায় নিয়ে বলয় কেন্দ্রিক হবে।এক্ষেত্রে ইতিহাস-ঐতিহ্যকেও দূরে ঠেলে দেয়া যাবে না। তৃতীয় বিশ্ব বিশেষ করে অনুন্নত -উন্নয়নশীল দেশগুলো বলয়কেন্দ্রিক সমর্থন প্রদানে এসব বিষয়কে অবশ্য বিচেনায় নিতে হবে। কেননা প্রতিটি দেশের পররাষ্ট্র নীতি ও কূটনীতি প্রতিস্থাপনে জাতীয় স্বার্থ প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক । কূটনীতি নির্ধারক সকল নিয়ামক বিবেচনার বিষয় হলেও বলয় কেন্দ্রিকতায় গিয়ে সিদ্বান্ত নেয়াতে রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকি।

প্রশ্ন দাঁড়ায়,বাংলাদেশ ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘে নিরপেক্ষতা দেখিয়ে কি ভবিষ্যতে কোন চাপের মুখে পড়বে কিনা?এমন প্রশ্নের উত্তর সরাসরি প্রদান করা সম্ভবপর নয়।উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া সংকটের সময়ও বাংলাদেশ রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র বলয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে।তবে যুদ্ধের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখো যায়, যুদ্ধরত দেশগুলোকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ চলামান অবস্থায় পরাশক্তি দেশগুলো সামরিক জোট গঠন করার সুযোগ পায় এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশগুলোকে এসব জোটে যোগদানে বাধ্য করে।উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, উপসাগরীয় যুদ্ধের কথা। ১৯৯০ সালের ২ আগস্ট ইরাক কুয়েত আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ৩৫ টি দেশের সমন্বয়ে যে আন্তর্জাতিক সামরকি জোট গঠন করা হয় তাতে বাংলাদেশকে সামরিক জোটে যোগদানে বাধ্য করা হয়।এমন কি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ যুদ্ধে মার্কিন জোটে ২৩০০ সেনা প্রেরণ করেন।অথচ তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ নিরপেক্ষতার অপশন গ্রহণ না করে যুদ্ধে সরাসরি পক্ষাবলম্বন করে কূটনৈতিক অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছিলেন।বলা হয়ে থাকে, এরশাদ তার রাষ্ট্র ক্ষমতার স্বার্থে ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্বান্ত নিয়েছিলেন।তার এমন ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্বান্তের দরুণ দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়েছে। ঠিক তেমনি,রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের আগ্রাসন বন্ধে আন্তর্জাতিক মানবিক জোট গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এ থেকে অনুমান করা যাচ্ছে, এ যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা বিশে^র রয়েছে দীর্ঘ চিন্তাভাবনা।তাই বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর অন্তর্জাতিক মানবিক জোট গঠন খুব শিঘ্রই দৃশ্যমান হবে বলার অপেক্ষা রাখে না।পশ্চিমা মিত্র প্রভাবশালী দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় বিশ্বের অনেক ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন টানার চেষ্টা করবে।এতে এশিয়ার দেশ ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা আরো বেড়ে যেতে পারে। বেড়ে যেতে পারে বাংলাদেশে অবস্থানরত পশ্চিমা কূটনীতিবিদদের চাপ। তবে এটি সত্য,বাংলাদেশ একটি ক্রমবর্ধমান উন্নয়নশীল রাষ্ট্র।বাংলাদেশের পাশেই দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী দেশ ভারত।ভারতের পার্শ্ববর্তী দেশ চীন।তাই ভূরাজনৈতিক কৌশল ও বাস্তবতায় বাংলাদেশ নিরপেক্ষতা দেখিয়ে তার স্মার্ট ও কৌশলী কূটনীতির প্রদর্শন করেছে।কেননা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ ভারত,চীন,পাকিস্তান এ বিষয়ে একই অবস্থানে রয়েছে।তাই বাংলাদেশ চাপমুক্ত থেকে বর্তমানে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যত এখনও অনিশ্চিত।যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায় এখনও আসে নি।তাই যুদ্ধের প্রথমদিকে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থানে নিয়ে কূটনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।কোন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোর উচিত তার ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং পার্শ্ববর্তী প্রভাবশালী দেশগুলোর পররাষ্ট্রনীতিকে বিবেচনায় নিয়ে সিদ্বান্ত নেয়া। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি সম্ভাবনাময়ী একটি দেশ। সমসাময়িকবিশে^ যুক্তরাষ্ট্রের কড়া নজর রয়েছে এশিয়ায়।বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক সহযোগিতার অজুহাতকে প্রভাবিত করে এই অঞ্চলে হস্তক্ষেপ করতে চায়।অবশ্য এটি বলতে হবে,বাংলাদেশ তার পূর্বের অবস্থানে বর্তমানে নেই।রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী ভূমিকায় অবতীর্ণ বাংলাদেশ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে বর্তমানে রয়েছে সর্বকালের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।ভারতও বাংলাদেশকে অন্যতম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মিত্র হিসেবে সমীহ করে যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে একে অপরকে পরিপূরক ভেবে কাজ করে যাচ্ছে। ভারত বাংলাদেশের ন্যায় রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে।কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধে ভারতকে খুব বেশি প্রত্যাশা করেছিল এবং করবেও বটে। কেননা যুক্তরাষ্ট্র ধারণা ছিল, ভারত ইউক্রেনকে সরাসরি সমর্থন করলে দক্ষিণ এশিয়ার ভারতের বন্ধুপ্রতীম অপরাপর দেশও একই বলয়ে চলে আসবে।সব মিলিয়ে বলা যায়, ভারত,চীনের এই যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত নিরপেক্ষ অবস্থান এবং বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক কৌশল ও বাস্তবতায় যুদ্ধে ভারসাম্যমূলক কূটনীতি গ্রহন করে নি:সন্দেহে স্মার্ট কূটনীতির প্রদর্শন করেছে।যা বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে পরাশক্তির ঝুঁকি মোকাবেলায় সহায়তা করবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

লেখক: কলামিস্ট
[email protected]

আপনার মন্তব্য